জার্মানীর স্টুডেন্ট ভিসা-১
জার্মানীর টিউশন ফি না থাকায়, জার্মানিতে পড়ার জন্য যা দরকার তা হল থাকা খাওয়ার খরচ। অন্যান্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশের চেয়ে জার্মানির খরচ তুলনামূলক ভাবে কম, বিশেষ করে স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ান দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে। জীবনযাত্রার খরচ অবশ্যই প্রত্যেকের লাইফ স্টাইলের উপর নির্ভর করে, তারপরও এখানে একটা ধারণা দেয়া হল।
জার্মানিতে ১৭৫টি শহর ও উপ-শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সব মিলিয়ে ৩৮০ টি স্বীকৃত ইউনিভার্সিটি রয়েছে। এইসব ভার্সিটিতে প্রদান করা হয় প্রায় ১৫,০০০ কোর্স। আমেরিকা বা কানাডার মত জার্মানিতে ইউনিভার্সিটি RANKING খুব জনপ্রিয় কোন বিষয় নয়। এর কারণ মূলত এই যে, জার্মানিতে পড়াশোনা ফ্রি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ফান্ডিং আসে মূলত স্টেট থেকে, যার পরিমাণ বন্টন করা আছে ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংখ্যা, রিসার্চ ইত্যাদির উপর। আমেরিকা কানাডার মতন এখানে ভার্সিটিগুলো ফান্ডিং এর উপর বাহিরের দেশের ছাত্রছাত্রীদের উপর নির্ভরশীল নয়। একারণে জার্মানির প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন খুব উঁচু মান বজায় রাখে, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষন করার জন্য এদেরকে র্যাঙ্কিং এর উপর নির্ভর করতে হয় না। সুতরাং জার্মানিতে পড়তে আসলে ইউনিভার্সিটির RANKING নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই বললেই চলে।
অর্থনীতি যতই শক্তিশালী হতে থাকুক, একটা ব্যাপারে জার্মানি পিছিয়ে ছিল অনেকদিন থেকেই। আর সেটা হল ঋণাত্মক জন্মহার। এই দেশে কাজ শেষ করার পর সব বুড়োবুড়ি মোটা অঙ্কের পেনশন পায়, সেই টাকার যোগান হয় মূলত যারা কাজ করছে তাদের দেয়া ট্যাক্স থেকে। এই দেশের প্রচলিত সিস্টেমের জন্য আরেকটা খারাপ খবর ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি। বুড়োবুড়িরা সহজে মরছে না, কিন্তু সরকার বাধ্য থাকছে তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত পেনশন ও চিকিৎসা ভাতা দিতে। একসময় জার্মানদের উপলব্ধি হল, জন্মহার কম থাকায় কোনভাবেই সব কর্মরত শ্রমিকদের ট্যাক্স দিয়েও একসময় আর পেনশনের ভাতা যোগাড় করা সম্ভব নয়। ধারণা করা হয়, আনুমানিক ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের পর থেকেই পেনশন ভাতা দেয়ার জন্য অন্য পথ খুঁজতে হবে সরকারকে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে খুলে গেল জার্মানিতে বিদেশীদের কাজ করার পথ। এইবার আগেকার কঠিন অবাস্তব নিয়ম কানুন বাদ দিয়ে ঢেলে সাজানো হল বিদেশী দক্ষ কর্মী নেবার আইন কানুন গুলোকে। চালু হল জার্মানিতে ব্লু-কার্ড।
যেহেতু জার্মানিতে টিউশন ফি নেই, পড়াশোনা এখানে কোন পণ্য নয় এবং একই সাথে সকল বিশ্ববিদ্যালয় একটা নির্দিষ্ট মান বজায় রাখে – এই দেশে পড়তে আসতে হলে ছাত্রছাত্রীদেরও একটা বিশেষ যোগ্যতার কথা খেয়াল রাখতে হবে। আর সেটা হল, একটা নির্দিষ্ট মান নিয়ন্ত্রণ! কোনমতে শুধু একটা ডিগ্রী সার্টিফিকেট নিয়ে জার্মানিতে পড়তে আসাও যেমন উচিত হবে না, তেমনি সত্যিকার অর্থে যাদের উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা নেই, তারা আসলে জার্মানিতে পড়ার জন্য যোগ্য নয়।
জার্মানিতে আসতে চাইলে সবচেয়ে আগে যে উপদেশটি আমি ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে থাকি, সেটা হল জার্মান শেখা। অনেকেই বলে জার্মান শেখা কঠিন, এত সময় কই ইত্যাদি। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, জার্মান শেখা আসলে একটি নতুন দেশে এসে সফল হবার মূল চাবিকাঠি। জার্মান না শেখার কারণে পড়াশোনা চলাকালীন সময় থেকে শুরু করে পরবর্তিতে চাকরী খোঁজা থেকে সামাজিক জীবনে যে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়, তার কাছে আগে থেকেই জার্মান শেখা অনেক বেশী সহজ এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
বাংলাদেশের সকল সরকারী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় যাদের ডিগ্রিকে জার্মানিতে সরাসরি স্বীকৃতি দেয়া হয়, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের নাম, স্থান এবং স্ট্যাটাসের তালিকা এই পর্বে দেয়া হল। তুমি যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পড়ে থাক, তাহলে জার্মানিতে তোমার ডিগ্রী সরাসরি গন্য করা হবে। মনে রাখবে, মাস্টার্সে ভর্তির জন্য বাংলাদেশ থেকে করা ৪ বছরের ব্যাচেলর গন্য করা হয়। একইসাথে এইসব ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে ২ বছর সফলভাবে পড়া সম্পন্ন করা থাকলে জার্মানিতে ব্যাচেলরে সরাসরি ভর্তি হওয়া সম্ভব,
জার্মানি যেতে সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর একটি ব্লক একাউন্ট দিয়ে ৮ হাজার ইউরো দেখানো। অনেকের জন্যই একটা বিশাল দেয়ালের মতন, আবার টাকা দেখানোর পরেও টাকা পাঠানো নিয়ে অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেককে আবার জার্মানিতে আসার পরে ব্লক একাউন্ট দেখাতে হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা দ্বিতীয় বছরেও চাওয়া হয়। এই বাঁধা পাশ কাটানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায়টির নাম স্পন্সরশীপ।
0 Reviews:
Post a Comment