আমি জানি আপনি বোকার মতো এই সাইট থেকে ওই সাইট, আবার ওই সাইট থেকে সেই সাইট হাঁতড়ে বেড়াচ্ছেন। কিভাবে আমেরিকা যাওয়া যায়, কিভাবে ইউরোপে যাওয়া যায়, কোন দেশে সহজে জব ভিসা দিচ্ছে, কোন দেশের ইমিগ্রেশন সবচেয়ে সহজ, কোন দেশে যাওয়ার পর কাগজপত্র পাওয়া সহজ হবে ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে চুল পেকে যাচ্ছে। ভেবেই পাচ্ছেননা আমেরিকার ভিসার পেপার প্রসেস করে আপনার ভিসা করাবে তাই বারো চোদ্দ লাখ টাকা কেন চাচ্ছে গুলশানের একজন এজেন্ট। কি বা এর রহস্য। একটা ভিসা করিয়েই ব্যাটা যদি এতো টাকা কামিয়ে নেয় তো সে পরের বছর এমপি ইলেকশনই করে বসবে। হ্যাঁ, একথা সত্যিই যে একটা ভিসা করানোর জন্য আমরা অনেক টাকা নেই। কিন্তু এর পেছনের কথা কি কেউ জানে? মনে হয়না। আপনি দিনের পর দিন নানা সাইট ঘেঁটে নিজে নিজে প্রসেসিং শিখে কাগজ জমা দিয়ে দেখুননা ভিসা হয় কিনা। সামান্য ইন্ডিয়ার ই-টোকেন কি নিজে নিজে করাতে পেরেছেন? নিজে নিজে ফর্ম ফিল আপ করে দেখুননা ই-টোকেন করাতে পারেন কিনা। দেখবেন কি এক গ্যাঁড়াকলে পড়ে আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন অথচ ক্লিক করলেও ডেট আসছেনা। কে পারবে ডেট নিতে? যে ভারতীয় এ্যামবাসিকে টাকা দিয়ে একটা সফটওয়্যার কিনেছে, সেই পারবে। যে টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কিনেছে সে কি বিনা টাকায় আপনাকে ই-টোকেন দেবে? ইন্ডিয়ার ভিসায় খরচ হয়ে যায় চার হাজার টাকার বেশী, তাহলে উন্নয়নের শীর্ষে থাকা আমেরিকার ভিসা কতো হওয়া উচিৎ? ইন্ডিয়ার উন্নতিকে কতো দিয়ে গুন করলে আমেরিকার সমান হয় ততো টাকা হওয়া উচিৎ।
রিস্ক-১, আমরা যারা ভিসার কাজ করি তারা নানাভাবে নিগৃহীত। কেউ বলে আদম, কেউ বলে দালাল আবার কেউ কেউ প্রতারক বলতেও ছাড়েনা। এ দেশের বেশীরভাগ লোকই মনে করে বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রতারনা হয় এবং এজেন্টরাই এজন্য দায়ী থাকে। একটা কথা আমি এর আগের পোস্টেও বলেছি যে, যে এজেন্ট লাখ লাখ টাকা খরচ করে একটা অফিস নিয়ে বসেছে সে কখনও প্রতারনা করেনা। প্রতারনা করে যে লোকটা আপনাকে সাখে করে নিয়ে আমাদের কাছে আসে সে। আমি নিজেও বহু লোকের কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। অনেকের ভিসা করিয়েছি কিন্তু তারা ভিসার পর টাকা দেয়নি। কারও আমেরিকার ভিসা লাগানো পাসপোর্ট আমার কাছে পড়ে আছে কিন্তু টাকা দিয়ে সে তা ছাড়াতে আসছেনা। ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাই। তাহলে আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো আপনাকে। আমার যে টাকা খরচ হয়েছে তাদের পেছনে তা দিয়ে নতুন একটা প্রেমিও গাড়ি কিনতে পারতাম। তাই অচেনা মানুষের কাছ থেকে জামানত না নিয়ে কাজ করা বড়ো একটা রিস্ক যেটিকে আমি সবচেয়ে বড়ো বলে মনে করি। তাই কেউ যদি আপনার কাছ থেকে টাকা না নিয়েই নিজে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে এবং ন্যুনতম ৫০ হাজার টাকার রিস্ক নেয় তবে ভিসার পর সে ৫০০০০০ টাকা লাভ করতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক।
রিস্ক-২, আমরা যারা ভিসার কাজ করি অনেক সময় বড়ো অংকের টাকার দরকার পড়লে নিজেরা ইনভেস্ট করিনা। তখন আমরা ইনভেস্টরের কাছ থেকে টাকা ধার করি। বা ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নেই। ভিসা হোক বা না হোক আমাদের টাকাগুলো তাদেরকে সুদে আসলে রিফান্ড করতেই হয়। কিন্তু যখন আপনি ফুল কন্ট্রাক্টে আমাদের সাথে কাজ করেন তখন ভিসা রিফিউজ হলে এক টাকাও দেননা। তাই ভিসা হলে স্বাভাবিকভাবে বেশী পরিমান টাকা দিতে হয় যাতে তাদের সুদে আসলে টাকা পরিশোধ করেও আমাদের বড়ো অংকের লাভ থাকে।
রিস্ক-৩, অনেক সময় বডি কন্ট্রাক্ট থাকে যখন ভিসার পরও ক্লায়েন্ট আমাদের টাকা দেয়না। টাকা দেয় যখন তারা সেই দেশের এয়ারপোর্ট ক্রশ করে তারপর। একে তো ভিসার ঝুঁকি নিতে হয়েছে তার ওপর এয়ারপোর্ট পার হবার ঝুঁকি। আপনি যদি ইংরেজী না জানেন বা আদম টাইপের হন তবে আপনার ঝুঁকি নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যদি কোনক্রমে ফিরে আসেন তবে আপনি তো এক টাকাও দেবেননা। তাহলে বিমান ভাড়াটা গেল কার? তারপর যদি আপনাকে আবার পাঠানো হয় তবে দ্বিতীয়বার বিমানভাড়া লাগলো কার? এতো ঝুঁকি নেবার পর আমি কতো প্রফিট করতে চাইবো? খুবই স্বাভাবিক,তাইনা?
তাই যখন আপনারা ফোন করে বিতর্ক শুরু করে দেন, ভাই এতো টাকা কেন? তখন আসলে এতো কথা বলার টাইম থাকেনা তাই এই ব্লগে লিখলাম। আরও কিছু বিষয় জানা দরকার আপনাদের। প্রতিদিন পত্রিকা খুললে বা অনলাইনে আপনি অনেক রকম বিজ্ঞাপন দেখেনঃ কম খরচে অমুক দেশের ভিসা, তমুক দেশের ইমিগ্রেশন ইত্যাদি। ঢাকা শহরে এমন শত শত এজেন্সি গড়ে উঠেছে যারা নানা ধরনের বিজ্ঞাপন দেয়। যেসব দেশের ভিসা হতেই পারেনা সেসব দেশের বিজ্ঞাপনেই ভর্তি তাদের পোস্টারগুলো। ঢাকা শহরে ছয় শোর ওপর এজেন্সি আছে। এরা প্রতিদিন নানা বিজ্ঞাপন দেয় কিন্তু তারা নিজেরা কিছুই করেনা। তাদের কাছে যারা যায় তাদের ফাইল নিয়ে তারা অন্য এজেন্সিতে ছোটে। এ রকম হিসাব করলে দেখা যায় যে আসল কাজ করে এমন এজেন্সির সংখ্যা মাত্র বিশ কিংবা ত্রিশটি। এদের তেমন বড়ো কোন অফিস নেই। ছোট অফিস নিয়ে কাজ করে, কোন সাইনবোর্ড নেই। এদের কাজ হলো পেপার প্রসেস করা ও ভিসা তোলা। এজেন্টরা এদের দারস্থ হন। কিন্তু আপনি জানেননা যে তারা সরাসরি এটা করছেনা। এই বিষয়টা পাইকারী আর খুচরা বিক্রেতার মতো। আপনি যেমন কখনও খুচরা মাল পাইকারী দোকান থেকে কিনতে পারবেননা তেমন আপনি কখনও আমাদের কাছে সরাসরি আসতে পারবেননা। আসতে গেলে এজেন্ট হয়ে আসতে হয়। এর একটা কারন বেশ উজ্জ্বল। আপনি যেসব এজেন্টের কাছে যান তাদের বিশাল বিজ্ঞাপন ও জমকালো অফিস আছে। তাদের সুন্দরী রিসেপশনিস্ট আছে। চমৎকারভাবে আপনাকে বোঝাবার জন্য দক্ষ কাউন্সেলর আছে। আপনি যখন তাদের কাছে ফাইল দেবেন তাদের কিন্তু ফাইল বগলে করে আমাদের কাছে দৌড়ুতে হবে। এটা আপনি জানেননা এবং জানারও দরকার নেই। আপনার দরকার ভিসা। ভিসার দাম কেন বেড়ে যায় এখন বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়?
can I know about how much cost for student visa in chezch Republic..??
ReplyDelete