টিউশন ফি কিভাবে কলেজে পাঠাবেন?
আমি নাহারের দিকে তাকিয়ে বললাম,‘তুমি তো ইংল্যান্ড যেতে চাচ্ছো তবে সমস্যা কি তোমার?’নাহার দ্বিধা করছে বলতে।
আমি বললাম,‘বলো নাহার, তুমি কি বলতে চাইছো?’
‘স্যার, আমি....আমি....।’
‘হ্যাঁ, বলো?’
‘মানে আমি টাকা পাঠাবার কথা বলছি, স্যার।’
‘বলো?’
‘মানে আমি বলতে চাইছি....।’
আমি নাহারের দিকে তাকালাম। দেখলাম ও দ্বিধা করছে বলতে। সম্ভবতঃ ও জানতে চাইছে কিভাবে ও টাকাটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে।
‘তুমি কি টাকা পাঠাবার কথা ভাবছো?’
‘জ্বি, স্যার।’
‘মানে তুমি বিষয়টা নিয়ে কনফিউজড, তাইতো?’
‘জ্বি, স্যার।’
শুধু এ সমস্যা নাহারের নয়। এ সমস্যা সব বাংলাদেশীদের। আমি যদি প্রথম ইংল্যান্ড বা আমেরিকা যেতাম তবে আমিও হয়তঃ এমনই ভাবতাম আমার টাকার নিরাপত্তা নিয়ে। আমি আমার নিজের ছাত্র ছাত্রীদেরকে ইংল্যন্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি করানোর সময় সবচেয়ে বড়ো যে ব্যপারটা আমাকে ঝামেলায় ফেলতো তা হচ্ছে টিউশন ফি পাঠানো। আপনি নিশ্চয় জানেন যে, কাস লেটারের জন্য আপনাকে টাকা পাঠাতে হচ্ছে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আপনি সাহস পাচ্ছেননা টাকা পাঠাতে। ভাবছেন কিভাবে টাকা পাঠাবেন। টাকা মার যাবে কিনা।
আসলে এই সম্ভাবনার কথাটা ইংল্যান্ডের, আমেরিকার, অস্ট্রেলিয়ার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষও ভাবে যে ভিসা হবার পর যদি আপনি টাকা না দেন তবে তারা কিভাবে টাকা পাবে আপনার কাছ থেকে। দুই পক্ষকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।
আর এই বিষয়টা নিয়ে যাতে দুশ্চিন্তায় পড়তে না হয় এজন্য এসেছে ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট। আপনাকেও ডিমান্ড ড্রাফট করতে হবে। তবে ভিসা হবার আগেই।
এজন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে। আর ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট করার জন্য আপনার কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে।
১। আপনার পাসপোর্ট আছে।
২। আপনার হাতে কন্ডিশনাল অফার লেটার এসেছে।
আপনি যখনই ইংল্যান্ডে বা যে দেশেই যাবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন তখনই আপনি পাসপোর্ট বানিয়ে রাখবেন কেননা সবকিছুতেই পাসপোর্ট একটা ফ্যাকটর। আপনি ওঊখঞঝ দিতে গেলেও আপনাকে পাসপোর্ট বানাতে হবে। মেডিকেল করতে গেলেও পাসপোর্ট লাগবে। ডিডি করতে গেলেও পাসপোর্ট লাগবে। কন্ডিশনাল অফার লেটারের জন্যও পাসপোর্ট নাম্বার লাগবে। অর্থাৎ আপনার ইংল্যান্ডে যাবার পুরো বিষয়টা সম্পাদন করতে হলে পাসপোর্ট লাগবেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাসপোর্ট বানিয়ে রাখুন।
ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট
আপনার টিউশন ফি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে অবশ্যই ডিডি করতে হবে। ডিডি না করেও অনেকে আপনাকে কলেজে ভর্তি করাতে পারে। ডিডি না করে যে সমস্ত উপায়ে আপনি কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন তা হলোঃ
১। ইংল্যান্ড থেকে আপনার কাছের কেউ আপনার টিউশন ফি প্রদান করতে পারে।
২। এদেশে অবস্থান করছে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় এর এমন এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিস আপনার টাকা গ্রহন করতে পারে।
৩। এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিস তাদের ক্লায়েন্ট মোটিভেশনের জন্য পরে টিউশন ফি প্রদানের সুজোগ দিতে পারে।
৪। ডিডি না করে টিটি করতে হতে পারে।
উপরের কারনগুলোতে আপনি ডিডি নাও করতে পারেন। কিন্তু ডিডি করাটা আপনার ও যিনি প্রসেস করছেন বা কলেজ সবার জন্যই ভালো। কেন আমি এ কথাটা বললাম? কারন হলো কয়েকটিঃ
১। কলেজ থেকে কাস লেটার ইস্যু করার জন্য পেইড টিউশন ফি অবশ্যই কাস লেটারে শো করতে হবে।
২। আপনি সরাসরি দেশ থেকে টাকা ইংল্যান্ডের কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছেননা কারন তাহলে আপনি মানি লন্ডারিং আইনে অভিযুক্ত হবেন।
৩। ধরুন এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিস ক্লায়েন্ট মোটিভেশনের জন্য ফ্রি কাস লেটার দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি তাদের নিকটাত্মীয় না হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনাকে কাস লেটারে উল্লেখিত টাকা তাদের এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার বা জমা রাখতে হবে। আর এ বিষয়টি একটু রিস্কি।
৪। আপনার কাছের কেউ যদি ইংল্যান্ড থেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার টিউশন ফি প্রদান করে তাহলে আপনি যদি এজেন্টের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করে থাকেন তবে তিনি নাখোশ হবে কেননা ঐ টিউশন ফি থেকে আপনার এজেন্ট কোন কমিশন পাচ্ছেননা।
৫। মনে করুন, আপনি এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিসকে সরাসরি টাকা দিয়ে কাস লেটার আনালেন। কাস লেটারে আপনার পেইড এ্যামাউন্টও লেখা থাকলো। কিন্তু আপনি ইংল্যান্ডে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যলয়ে গিয়ে দেখলেন যে আপনার টিউশন ফি আসলে দেয়া হয়নি।
উপরের এসব সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনার ডিডি করা উচিৎ। ডিডি একটা চেকের মতো পাতা। এই চেকটা কলেজ ছাড়া কেউ ভাঙ্গাতে পারবেনা। ফলে আপনি যদি নিজে ডিডি করে তা এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিসকে দিয়ে দেন, তারা তা ভাঙ্গাতে পারবেনা। আপনিও টিউশন ফি পাঠানোর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবেন।
কয়েকটা কারনে নিজে নিজে টিউশন ফি পাঠানো উচিৎ নয়ঃ
১। ধরুন, আপনার একজন পরিচিত বা নিকটাত্মীয় থাকে ইংল্যন্ডে। তিনি আপনার হয়ে টিউশন ফি দিয়ে দিলো। যদি আপনি নিজে নিজে পুরো ভিসা পেপার প্রসেস করেন তবে ঠিক আছে কিন্তু যদি এজেন্ট ভিসা পেপার প্রসেস করে থাকে তবে সমস্যা। কেননা সে কোন কমিশন পাচ্ছেনা আপনার প্রদেয় টিউশন ফি থেকে। সেক্ষেত্রে সে তার সার্ভিস চার্জ চাইবে। আপনি যদি তাকে ডিমান্ড ড্রাফট দিয়ে দিতেন তবে সে টিউশন ফি থেকে তার কমিশন পেতো আর তাহলে তাকে কোন সার্ভিস চার্জ দেয়া লাগতোনা। বা দিলেও অল্প দেয়া লাগতো।২। আপনি নিজে যদি কোনভাবে টাকা বা ডিডি সরাসরি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান তবে ভিসা না হলে তা কিভাবে ফেরৎ আনবেন একবার ভেবে দেখুন। নিয়ম হলো যে, যদি আপনার ভিসা না হয় সেক্ষেত্রে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আপনার ডিডি থেকে তাদের সার্ভিস চার্জ কেটে রেখে আপনার বাকি টাকা ফেরৎ দেবে আপনার এ্যাকাউন্টে। কিন্তু কোন কারনে যদি তারা তা না দেয় তবে আপনি কি করতে পারবেন? আপনি কিভাবে তাদের কাছ থেকে তা ফেরৎ আনবেন? এজন্য আপনার উচিৎ কোন এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিস থেকে ডিডি প্রদান করে তাদের মাধ্যমে কাস লেটার গ্রহন করা। তাহলে আপনার ভিসা না হলে আপনি তাদের অফিস থেকে তা ফেরৎ আনতে পারবেন।
ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট অনেকভাবে নিরাপদঃ
১। আপনি আপনার এ্যাকউন্টের মাধ্যমে ডিডি করে টাকা সরাসরি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টে পাঠাচ্ছেন। এখানে কোন থার্ড পার্টি নেই। ডিডি অনেকটা ক্রশড চেকের মতো।ধরুন আপনি একটা ব্যাংকে গেছেন আপনার এ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেবার জন্য। কিন্তু আপনি কি সরাসরি তা ব্যাংকের এ্যকাউন্টে জমা দিতে পারছেন? নাকি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তার হাতে দিচ্ছেন? আপনি তো সরাসরি টাকা আপনার হাত থেকে ব্যাংকের ভল্টে দিতে পারছেননা। কোননা কোন কর্মকর্তার হাতে দিতে হচ্ছে। এজন্য আপনি এ্যাকাউন্ট পে চেক বা ক্রশড চেক দিলেন যাতে কোন কর্মকর্তা তা ভাঙ্গিয়ে নিতে না পারে। ফলে আপনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে টাকা আপনার এ্যাকাউন্টেই জমা হলো।
ডিডি অনেকটা ক্রশড চেকের মতো জিনিষ। আপনি ডিডি করছেন কলেজের নামে এবং তাদের এ্যাকাউন্ট বরাবর। তাই এটা কোন এজেন্ট ভাঙ্গাতে পারবেনা। একমাত্র এটা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টে ক্যাশ হবে। তাই ডিডি নিয়েও কোন ভাবনা নেই। এজেন্টও নিশ্চিত হয়ে গেল যে আপনার ভিসা হয়ে যাবার পর আপনি কোন কারনে না গেলে তাতে তাদের কোন ক্ষতি নেই। তারা কমিশন ঠিকই পাবে। আর আপনি নিজেও টাকা পরিশোধ করায় আরেকটু সিরিয়াস হবেন এবং বিদেশে পড়তে যাবার ব্যপারে মনোযোগী হবেন।
ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট কিভাবে করতে হয়?
ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট করতে হলে আপনার চাই কয়েকটি জিনিষঃ
১। আপনার পাসপোর্ট ।
২। কন্ডিশনাল অফার লেটার।
৩। চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৪। এক কপি নোমিনীর ছবি।
৫। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র।
৬। নোমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্র।
আপনার হাতে কন্ডিশনাল অফার লেটার আসার পরই আপনি কেবল ডিডি করতে পারবেন। আপনার আগেই পাসপোর্ট করা আছে তাই খুব দ্রুত ছবি তুলে ফেলুন। আপনার লাগবে চার কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, নোমিনীর এক কপি ছবি, আপনার আর নোমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্র।
ডিডি করতে হবে ব্যাংকে। তবে সব ব্যাংকে আপনি ডিডি করতে পারবেননা। কেবলমাত্র ইন্টারন্যাশনাল ব্রাঞ্চগুলোতেই ডিডি করা সম্ভব। সব ব্যাংকেই এই ব্রাঞ্চটি রয়েছে। আপনি যেকোন ব্রাঞ্চে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি তারা বলে যে তাদের ব্রাঞ্চে ডিডি করতে পারবেন তবে সেখান থেকে আপনি ডিডি করতে পারবেন।
ডিডি করা একটু সময় সাপেক্ষ ব্যপার। আপনাকে প্রথমে একটা সেভিংস এ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। এই সেভিংস এ্যাকাউন্টটা যখন ওপেন করবেন অফিসার আপনাকে কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেবেন। যেমন আপনি যদি এ্যাকাউন্টটা আপনার ফরেন এ্যকাউন্ট এর সাথে লিংক করতে চান তবে তা করতে পারেন।
এ্যাকাউন্ট ওপেন করার পর আপনি কন্ডিশনাল অফার লেটারে উল্লেখিত পাউন্ড এর সমপরিমান টাকা আপনার এ্যাকাউন্টে রাখবেন। তারপর অফিসার একটা ডিডি করবেন যা দেখতে অনেকটা চেক এর মতো। কিন্তু চেকের সাথে এর পার্থক্য হলো এটির উপরের চেকের যে স্থানে আপনার নাম লেখেন সেখানে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যলয়ের নাম লেখা হবে। তাদের ঠিকানা ও যে ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে কন্ডিশনাল অফার লেটারে তার উল্লেখ থাকে। তাই সেই এ্যাড্রেস বরাবর ডিডি করা হবে।
ডিডি করা হলে আপনার এ্যাকাউন্ট থেকে টাকাটা কেটে নেয়া হবে এবং আপনাকে চেকের মতো দেখতে কাগজটা দেয়া হবে। যেটা দেখতে চেক কিংবা পে অর্ডারের মতোই।
এই ডিডি বা ডিমান্ড ড্রাফট এর টাকা কয়েক ঘন্টা পরেই কলেজের বা বিশ্ববিদ্যলয়ের ব্যাংক এ্যকাউন্টে টাকা চলে যাবে কিন্তু তারা এটা তুলতে পারবেনা যতক্ষন না আপনার ডিডি তাদের হাতে পৌছায়। তাই আপনার টাকাটা যাতে তারা ভাঙ্গাতে পারে সেজন্য তাদেরকে ঐ ডিডিটা পাঠাতে হবে। তারা যখন ডিডিটা পাবে তখনই কেবল ডিডির টাকাটা ব্যাংক থেকে তুলতে পারবে। এরমানে আপনি টিউশন ফি পরিশোধ করলেন।
দেখুন, এখন যদি কোন কলেজ আপনার টাকা মেরে দেয় তবে আপনার কিছুই করার নেই। আপনি গিয়ে তাদেরকে ধরবেন সে উপায়ও নেই আপনার। কিন্তু যদি আপনি ডিডিটা কোন এজেন্ট বা রিজিওনাল অফিসে দিতেন তবে তাদেরকে ধরতে পারতেন অর্থাৎ তারা ডিডি পাঠানো বা ফেরৎ আনা সব দায়িত্ব নিতো।
যেভাবেই টাকা পরিশোধ হোকনা কেন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আপনার টাকা পেয়ে গেল। এখন শুধু কাস লেটার আসার অপেক্ষা।
0 Reviews:
Post a Comment