মালয়েশিয়া বর্তমানে শুধুমাত্র এশিয়ার মধ্যেই নয়, বরং সারাবিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সর্বক্ষেত্রে মালয়েশিয়া পৃথিবীর বুকে একটি মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আর তাই বিশ্ববাসীর নজর এখন এশিয়ার এই দেশটির দিকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করেছে অভূতপূর্ব উন্নতি। সারা মালয়েশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য উন্নতমানের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা বিশেষত দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী মালয়েশিয়ায় পড়তে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ার পড়াশোনার পেছনে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের কিছু কারন অবশ্যই রয়েছে। কি সেগুলো?
যদি ভালোভাবে বিশ্লেষন করেন তবে দেখবেন মালয়েশিয়ার পড়াশোনা করতে যাওয়ার পেছনে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের নি¤েœাক্ত কারনসমূহ রয়েছে।
১। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে বেশী দুরে নয়। ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই মালয়েশিয়া পৌছানো যায় ও আসা যায়। ফলে পড়াশোনা করতে গেলেও বাড়িতে কোন সমস্যা দেখা দিলে চট করে দেশে ফেরা যায় আবার ফেরা যায়। ভিসার সহজপ্রাপ্যতা থাকায় অভিভাবকদের পক্ষেও মালয়েশিয়া গিয়ে তদারকি করা সম্ভব হয়ে থাকে।
২। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশসমূহ তাদের ভিসা ব্যবস্থায় কঠোরতা আরোপ করার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী সেসব দেশে যেতে পারেনা। আবার দেশেও পড়াশোনা করার কোন পরিবেশ নেই। দেশের রাজনীতি নামের কুষ্ঠনীতি ছাত্রছাত্রী সহ শিক্ষকদের পর্যন্ত পঙ্গু করে দিয়েছে। ফলে তারা মালয়েশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
৩। মালয়েশিয়ায় ইউরোপ আমেরিকার সংস্কৃতির প্রভাব বেশ কমই, ফলে অভিভাবকরা যখন আমেরিকার কথা ভাবেন তাদের মনে এক ধরনের শংকা কাজ করে যে, ছেলেমেয়ে সেখানে গিয়ে কোন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়াবে কিনা। মালয়েশিয়ার ব্যপারে তাদের ব্যপারে তেমন কোন শংকা কাজ করেনা।
৪। পড়াশোনা করার জন্য যথেষ্ঠ ভালো পরিবেশ রয়েছে মালয়েশিয়ায়। তাছাড়া খরচও আমেরিকা ইউরোপের চেয়ে কম। লেখাপড়ার মান ভালো ও খরচ সবদিক দিয়ে অনেক কম। আমেরিকা ও ইউরোপে তিন বছরের থাকার খরচ দিয়ে একজন ছাত্র মালয়েশিয়ায় থাকা খাওয়া সহ পড়াশোনা শেষ করতে পারে।
৫। মালয়েশিয়ায় যদি আপনি কাজ নাও জানেন তবে ৩০,০০০ হাজার টাকার জব ঠিকই পাবেন। আর কাজ জানলে ৫০-৬০,০০০ টাকার জব কোন ব্যপারই নয়। (মালয়েশিয়ায় কাজ না পেলে ০১৭৭২৩৬৯৪৫১ নাম্বারে ফোন করুন।)
আসুন আমেরিকা ইউরোপ আর নয়, এবার আমরা মালয়েশিয়ার দিকে যাই।
আমেরিকায়, ইংল্যান্ডে কেন যাবেন না
আপনি যদি বোকা হয়ে না থাকেন আর যদি আমেরিকার পোকা আপনার মাথায় ঢুকে না থাকে তবে আপনি নিশ্চয় আমেরিকায় পড়তে যেতে চাইবেননা। আমি জানি আপনি আমেরিকায় কেন যেতে চাইছেন।
১। জীবনে অনেক হলিউডি ছবি দেখেছেন।
২। ইংরেজীতে মোটামুটি ভালো আপনি।
৩। আপনি ভাবেন যে,আমেরিকায় গেলে গপাস করে একটা জব পেয়ে যাবেন আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেশে পাঠাবেন।
৪। এখানে তো অনেক শাসন নিয়ম কানুন আর সামাজিকতা। আমেরিকায় গেলে কাজ শেষে সন্ধ্যায় বারে বা ডিসকোতে কিছুক্ষন নাচানাচি করা যাবে আর সেই সাথে চলবে রঙ্গিন পানীয়। আর যদি দু’একটা স্বর্নকেশীর সাথে পরিচয় হয়ে যায় তো কেল্লা ফতেহ।
৫। ওদেশে নাকি আমাদের রঙের চামড়ার অনেক কদর।
৬। ওদেশ থেকে একটা ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে ওদেশেই একটা চমৎকার জব বাগিয়ে নেয়া যাবে।
৭। ওদেশে চাকরি করবো আর সেই টাকায় পড়বো। আর দেশে পাঠাবো টাকা। সেই টাকায় আমার ভাই ভর্তি হবে এনএস ইউ তে। আমার বাপ চালাবে এ্যালিয়ন। বোনের বিয়ে হবে নামীদামী ব্যবসায়ীর সাথে। আর মাকে প্রতিমাসে পান খাওয়ার জন্য এক হাজার ডলার পাঠাবো।
৮। আর একসময় আমি ওদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবো। তারপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসবো আমেরিকায়। কোন এক আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করবো। তারপর We will ride off into the sun and live happily ever after আমার কথাটি ফুরোলো নটে গাছটি মুড়োলো।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আপনি আমেরিকায় দশ বছর থাকলেও উপরের ব্যপারগুলোর কোনটাই ঘটবেনা। যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় যাবার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে নিচের সত্যি বিষয়গুলোর দিকে নজর দিন। স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝে ফারাক অনেক। আমি ইংল্যান্ডে নয় বছর ছিলাম। পড়াশোনাও সেখানে। কিন্তু যখন আমি সত্যিটা বুঝলাম, তখন একটি দিনও আমি সেখানে ওভারস্টে করিনি।
১। আপনি যেসব হলিউডি ছবি দেখেছেন তার বেশীরভাগই আমারও দেখা হয়েছে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ লোকই হলিউডি ছবি দেখে এবং শুধু দেখেনা, তারা স্বপ্ন দেখে একদিন আমেরিকায় গিয়ে ছবি বানাবে, সেই ছবিতে অভিনয়ও করবে। ফলে আপনি যদি কখনও বিশাল স্বপ্নকে স্বার্থক করে হলিউডে পৌছুতে পারেনও তবে দেখবেন হলিউডের স্টুডিওতে আপনার মতো হাজার হাজার মানুষ গিজগিজ করছে। ইউনিভার্সাল স্টুডিও আপনাকে টিকিটও দিতে পারছেনা। আপনি ভেবেছিলেন আপনি আানমনে ঘুরে বেড়াবেন আর দেখবেন কোথায় কোথায় কোন কোন ছবির সুটিং হয়েছিলো তা দেখবেন। কিন্তু দেখলেন, আপনার আগেই সেসব জায়গায় হাজার হাজার মানুষ গিয়ে ভরে আছে। হলিউডকে মনে হচ্ছে একটা স্টেডিয়াম যেখানে বাংলাদেশ আর ভারতের ক্রিকেট চলছে।
২। জীবনে অনেক ইংরেজী ভোকাবুলারী শিখেছেন। বেশ ইংরেজীও বলতে পারেন। লোকে অবাক হয়ে আপনার ইংলিশ কথা শোনে আর আপশোষ করে। কিন্তু CONVERSE IS THE CASE হলো নিউ ইয়র্কে পৌছে। আপনার মনে হলো ওরা যে ভাষায় কথা বলে তা ইংরেজী নয়। বরং ওরা বোধহয় কোন ইংরেজী আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। নিগ্রোরা কি যে বলে তা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হয়। আমেরিকায় কেউ আপনার মতো করে ইংরেজী বলেনা। আপনার নিজেকে মনে হবে অনেক কষ্টে শুদ্ধভাষা চর্চা করে গ্রাম থেকে সদ্য ঢাকায় আসা কোন যুবক যে সদরঘাটে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকচ্ছে আর ভাবছে তার ভাষা শিক্ষার বইতে কোন ভুল হয়েছিলো। আমেরিকান ইংরেজী আবার নতুন করে শিখতে হবে আপনাকে।
৩। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আমেরিকাতে, ইংল্যান্ডে যাচ্ছে। তাদের জন্য আমেরিকাকে নতুন করে সাজতে হয়েছে। তাদের জবের এ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হয়েছে। এখন এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে আপনার জন্য আর কোনই পোস্ট নেই। সব শেষ। আপনি তো আমেরিকাতে এসে পড়েছেন। এখন কি করবেন? সকাল হলেই দেখবেন নিউ ইয়র্কের বাঙালিরা হাতে তোয়ালে নিয়ে চলেছে গাড়ি মোছার জন্য। লাখ লাখ টাকা শেষ করে আমেরিকাতে এসে আপনাকেও শেষ পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ি ৫ ডলারে পরিস্কার করতে হবে? তাও যদি কেউ দয়া করে আপনাকে তাার গাড়ি পরিস্কার করতে দেয়। অন্যরা দেখা যাবে তিন ডলারে আগেই অফার দিয়ে বসেছে। আপনি বাদ। দেশে পাঠাবেন টাকা? সে চিন্তা বাদ। এখন নিউ ইয়র্কে খাওয়ার চিন্তা নিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে আপনাকে।
৪। সন্ধ্যার পর ডিসকো আর বারে নাচানাচি করবেন? টাকা কই? ডিসকোতে তো এমনিই নাচানাচি করতে দেবেনা ওরা। আপনাকে রঙ্গিন পানি পান করতে হবে। আর রঙিন পানি পান করার টাকা কই আপনার কাছে? সারাদিনে হয়ত: বড় জোর পাঁচটা গাড়ি মুছেছেন পাঁচ ডলার করে। সারাদিনে পঁচিশ ডলার। এক পেগ মদেই তো চলে যাবে দশটা নোট। আর নাচাকোঁদা করার মানসিক বল কোথায়? স্বর্নকেশী মেয়ের চিন্তা? নিউ ইয়র্কে গেলেই বুঝবেন স্বর্নকেশীরা আপনার দিকে তাকাচ্ছেও না। আপনার মতো লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী ভরে আছে নিউ ইয়র্কে। ওদের মান সম্মান, টাকা কড়ি, স্ট্যাটাস সব কিছুই আলাদা। অবৈধ অভিবাসীদের দিকে ওরা তাকাবে কেন? বড়োজোর আপনাকে তাদের গাড়িটা মুছতে দিতে পারে তারা।
৫। আপনি ভেবেছিলেন আপনার গায়ে চা রঙ্গা চামড়া দেখে মজে যাবে আমেরিকানরা? আজ ১৯৭০ সাল নয় যে আমেরিকাতে এশিয়ানদের ভিড় নেই। আজ এশিয়ানদের ভিড়ে প্রকৃত আমেরিকানরা হারিয়ে গেছে। আপনার চা রঙ্গা চামড়া দেখে দেখে ওরা এতো বিরক্ত যে অনেক স্টলের চাকরির ফর্মে লেখাই থাকে ‘নো এশিয়ান প্লিজ।’
৬-৭। ওদের দেশে একটা ব্যাচেলর ডিগ্রীর দাম অনেক। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রী করে আমেরিকায় যান ব্যাচেলর করার জন্য তবে পার ইয়ার মিনিমাম ১২০০০ ডলার দিতে হবে ইউনিভার্সিটিকে। ১২০০০ ডলারের কম হলে সেই ইউনিভার্সিটিকে মানসম্মত বলে ধরা হয়না। তাই আমেরিকার ভিসা পাবার জন্য নিশ্চয়ই আপনি আমেরিকার ভালো ইউনিভার্সিটিতেই এ্যাপ্লাই করেছিলেন। আর সেই ইউনিভার্সিটির পার ইয়ার টিউশন ফি নিশ্চয়ই ১২০০০ ডলারের উপরে। তাহলে আপনি কি মনে করেন চাকরি করে সেখানে থাকা খাওয়া হাতখরচ করে বাকি টাকা টিউশন ফি দিতে পারবেন? আপনি যদি সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন তবে বলবো দেশ থেকে টাকা না নিয়ে আপনি পড়াশোনা শেষ করতে পারবেননা। আর আপনি নিশ্চয়ই তা করতে চাননা। তাহলে জেনে রাখুন আমেরিকায় গিয়ে ১০০ জন ছাত্রের ভেতর ৯৮ জনই পড়াশোনা করতে পারেনা। বাকি ২ জন উচ্চবিত্ত শ্রেনীর। তাই ৯৮ জনই হয়ে যায় অবৈধ কর্মী।
৮। আমেরিকাতে বহু মানুষ আছে যারা প্রায় দশ পনেরো বছর আমেরিকার মাটিতে কাটিয়ে দিয়েছে অবৈধ হিসাবে কিন্তু এখনও পাননি সেই সোনার হরিন-নাগরিকত্ব বা স্থায়ী থাকার সুজোগ গ্রিনকার্ড। আমেরিকাতে বছরের পর বছর কাটালেও আপনি সেখানে অবৈধ হিসাবেই গন্য হবেন। আর অবৈধ হয়ে গেলে দেশে ফিরতেও পারবেননা। দেশে একবার ফিরে ফিরে যাবার কোন সুযোগই নেই। তাই দেখা যায় দেশ থেকে কোন দুঃসংবাদ পেয়ে আমেরিকাতে বসে চোখের পানি ফেলা ছাড়া উপায় থাকে অবৈধ অভিবাসীর।
যারা আমেরিকাকে মনে করে স্বর্গ তাদের জন্য বলছিঃ কোনভাবেই স্টুডেন্ট ভিসায় সেখানে যাবেননা। আপনি যদি ব্যাপক টাকার মালিক হন তবেই আপনি সেখানে যেতে পারেন। কেননা আপনার টাকা থাকলেই আমেরিকা আপনার জন্য স্বর্গ। টাকা না থাকলে ওটা দোজখের চেয়ে খারাপ। আর আমেরিকার ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে রিফিউজ হওয়া আরও বেশি ন্যাক্কারজনক। প্রতিদিন আপনার মতো হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ভিসা পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু দেশের টাকাগুলো আগেই ভিসা ফি হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে তারা। তাই আসুন আজ থেকে স্লোগান দেইঃ
আমেরিকা আর নয়, ইংল্যান্ড আর নয়।
ওদেরকে আর দেশ থেকে টাকা নিয়ে যেতে দেবেননা। আপনার সঠিক সিদ্ধান্তের ভুলে দেশের লাখ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে আমেরিকা ইউরোপে। প্রবাসীরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে দেশে যে ডলার পাঠাচ্ছেন আপনি আবার তা আমেরিকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। নিজেকে খুব ছোট বলে মনে হচ্ছেনা? তারা বিনা কারনে রিফিউজ করছে আপনাকে। রিফিউজের কোন কারন দর্শাচ্ছেওনা। জাস্ট আপনার টাকাটা তাদের দরকার। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তেমন হবার কোন সম্ভাবনা নেই। আপনি কেন মালয়েশিয়ায় পড়তে যাবেন? উপরের আমি মালয়েশিয়ায় পড়তে যাবার ৪টি কারন দর্শিয়েছি, পড়ে নিন।
মালয়েশিয়ার পড়াশোনার পেছনে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের কিছু কারন অবশ্যই রয়েছে। কি সেগুলো?
যদি ভালোভাবে বিশ্লেষন করেন তবে দেখবেন মালয়েশিয়ার পড়াশোনা করতে যাওয়ার পেছনে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের নি¤েœাক্ত কারনসমূহ রয়েছে।
১। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে বেশী দুরে নয়। ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই মালয়েশিয়া পৌছানো যায় ও আসা যায়। ফলে পড়াশোনা করতে গেলেও বাড়িতে কোন সমস্যা দেখা দিলে চট করে দেশে ফেরা যায় আবার ফেরা যায়। ভিসার সহজপ্রাপ্যতা থাকায় অভিভাবকদের পক্ষেও মালয়েশিয়া গিয়ে তদারকি করা সম্ভব হয়ে থাকে।
২। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশসমূহ তাদের ভিসা ব্যবস্থায় কঠোরতা আরোপ করার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী সেসব দেশে যেতে পারেনা। আবার দেশেও পড়াশোনা করার কোন পরিবেশ নেই। দেশের রাজনীতি নামের কুষ্ঠনীতি ছাত্রছাত্রী সহ শিক্ষকদের পর্যন্ত পঙ্গু করে দিয়েছে। ফলে তারা মালয়েশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
৩। মালয়েশিয়ায় ইউরোপ আমেরিকার সংস্কৃতির প্রভাব বেশ কমই, ফলে অভিভাবকরা যখন আমেরিকার কথা ভাবেন তাদের মনে এক ধরনের শংকা কাজ করে যে, ছেলেমেয়ে সেখানে গিয়ে কোন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়াবে কিনা। মালয়েশিয়ার ব্যপারে তাদের ব্যপারে তেমন কোন শংকা কাজ করেনা।
৪। পড়াশোনা করার জন্য যথেষ্ঠ ভালো পরিবেশ রয়েছে মালয়েশিয়ায়। তাছাড়া খরচও আমেরিকা ইউরোপের চেয়ে কম। লেখাপড়ার মান ভালো ও খরচ সবদিক দিয়ে অনেক কম। আমেরিকা ও ইউরোপে তিন বছরের থাকার খরচ দিয়ে একজন ছাত্র মালয়েশিয়ায় থাকা খাওয়া সহ পড়াশোনা শেষ করতে পারে।
৫। মালয়েশিয়ায় যদি আপনি কাজ নাও জানেন তবে ৩০,০০০ হাজার টাকার জব ঠিকই পাবেন। আর কাজ জানলে ৫০-৬০,০০০ টাকার জব কোন ব্যপারই নয়। (মালয়েশিয়ায় কাজ না পেলে ০১৭৭২৩৬৯৪৫১ নাম্বারে ফোন করুন।)
আসুন আমেরিকা ইউরোপ আর নয়, এবার আমরা মালয়েশিয়ার দিকে যাই।
আমেরিকায়, ইংল্যান্ডে কেন যাবেন না
আপনি যদি বোকা হয়ে না থাকেন আর যদি আমেরিকার পোকা আপনার মাথায় ঢুকে না থাকে তবে আপনি নিশ্চয় আমেরিকায় পড়তে যেতে চাইবেননা। আমি জানি আপনি আমেরিকায় কেন যেতে চাইছেন।
১। জীবনে অনেক হলিউডি ছবি দেখেছেন।
২। ইংরেজীতে মোটামুটি ভালো আপনি।
৩। আপনি ভাবেন যে,আমেরিকায় গেলে গপাস করে একটা জব পেয়ে যাবেন আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দেশে পাঠাবেন।
৪। এখানে তো অনেক শাসন নিয়ম কানুন আর সামাজিকতা। আমেরিকায় গেলে কাজ শেষে সন্ধ্যায় বারে বা ডিসকোতে কিছুক্ষন নাচানাচি করা যাবে আর সেই সাথে চলবে রঙ্গিন পানীয়। আর যদি দু’একটা স্বর্নকেশীর সাথে পরিচয় হয়ে যায় তো কেল্লা ফতেহ।
৫। ওদেশে নাকি আমাদের রঙের চামড়ার অনেক কদর।
৬। ওদেশ থেকে একটা ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়ে ওদেশেই একটা চমৎকার জব বাগিয়ে নেয়া যাবে।
৭। ওদেশে চাকরি করবো আর সেই টাকায় পড়বো। আর দেশে পাঠাবো টাকা। সেই টাকায় আমার ভাই ভর্তি হবে এনএস ইউ তে। আমার বাপ চালাবে এ্যালিয়ন। বোনের বিয়ে হবে নামীদামী ব্যবসায়ীর সাথে। আর মাকে প্রতিমাসে পান খাওয়ার জন্য এক হাজার ডলার পাঠাবো।
৮। আর একসময় আমি ওদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবো। তারপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসবো আমেরিকায়। কোন এক আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করবো। তারপর We will ride off into the sun and live happily ever after আমার কথাটি ফুরোলো নটে গাছটি মুড়োলো।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আপনি আমেরিকায় দশ বছর থাকলেও উপরের ব্যপারগুলোর কোনটাই ঘটবেনা। যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় যাবার পরিকল্পনা করে থাকেন তবে নিচের সত্যি বিষয়গুলোর দিকে নজর দিন। স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝে ফারাক অনেক। আমি ইংল্যান্ডে নয় বছর ছিলাম। পড়াশোনাও সেখানে। কিন্তু যখন আমি সত্যিটা বুঝলাম, তখন একটি দিনও আমি সেখানে ওভারস্টে করিনি।
১। আপনি যেসব হলিউডি ছবি দেখেছেন তার বেশীরভাগই আমারও দেখা হয়েছে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ লোকই হলিউডি ছবি দেখে এবং শুধু দেখেনা, তারা স্বপ্ন দেখে একদিন আমেরিকায় গিয়ে ছবি বানাবে, সেই ছবিতে অভিনয়ও করবে। ফলে আপনি যদি কখনও বিশাল স্বপ্নকে স্বার্থক করে হলিউডে পৌছুতে পারেনও তবে দেখবেন হলিউডের স্টুডিওতে আপনার মতো হাজার হাজার মানুষ গিজগিজ করছে। ইউনিভার্সাল স্টুডিও আপনাকে টিকিটও দিতে পারছেনা। আপনি ভেবেছিলেন আপনি আানমনে ঘুরে বেড়াবেন আর দেখবেন কোথায় কোথায় কোন কোন ছবির সুটিং হয়েছিলো তা দেখবেন। কিন্তু দেখলেন, আপনার আগেই সেসব জায়গায় হাজার হাজার মানুষ গিয়ে ভরে আছে। হলিউডকে মনে হচ্ছে একটা স্টেডিয়াম যেখানে বাংলাদেশ আর ভারতের ক্রিকেট চলছে।
২। জীবনে অনেক ইংরেজী ভোকাবুলারী শিখেছেন। বেশ ইংরেজীও বলতে পারেন। লোকে অবাক হয়ে আপনার ইংলিশ কথা শোনে আর আপশোষ করে। কিন্তু CONVERSE IS THE CASE হলো নিউ ইয়র্কে পৌছে। আপনার মনে হলো ওরা যে ভাষায় কথা বলে তা ইংরেজী নয়। বরং ওরা বোধহয় কোন ইংরেজী আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। নিগ্রোরা কি যে বলে তা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হয়। আমেরিকায় কেউ আপনার মতো করে ইংরেজী বলেনা। আপনার নিজেকে মনে হবে অনেক কষ্টে শুদ্ধভাষা চর্চা করে গ্রাম থেকে সদ্য ঢাকায় আসা কোন যুবক যে সদরঘাটে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকচ্ছে আর ভাবছে তার ভাষা শিক্ষার বইতে কোন ভুল হয়েছিলো। আমেরিকান ইংরেজী আবার নতুন করে শিখতে হবে আপনাকে।
৩। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আমেরিকাতে, ইংল্যান্ডে যাচ্ছে। তাদের জন্য আমেরিকাকে নতুন করে সাজতে হয়েছে। তাদের জবের এ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হয়েছে। এখন এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে আপনার জন্য আর কোনই পোস্ট নেই। সব শেষ। আপনি তো আমেরিকাতে এসে পড়েছেন। এখন কি করবেন? সকাল হলেই দেখবেন নিউ ইয়র্কের বাঙালিরা হাতে তোয়ালে নিয়ে চলেছে গাড়ি মোছার জন্য। লাখ লাখ টাকা শেষ করে আমেরিকাতে এসে আপনাকেও শেষ পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ি ৫ ডলারে পরিস্কার করতে হবে? তাও যদি কেউ দয়া করে আপনাকে তাার গাড়ি পরিস্কার করতে দেয়। অন্যরা দেখা যাবে তিন ডলারে আগেই অফার দিয়ে বসেছে। আপনি বাদ। দেশে পাঠাবেন টাকা? সে চিন্তা বাদ। এখন নিউ ইয়র্কে খাওয়ার চিন্তা নিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে আপনাকে।
৪। সন্ধ্যার পর ডিসকো আর বারে নাচানাচি করবেন? টাকা কই? ডিসকোতে তো এমনিই নাচানাচি করতে দেবেনা ওরা। আপনাকে রঙ্গিন পানি পান করতে হবে। আর রঙিন পানি পান করার টাকা কই আপনার কাছে? সারাদিনে হয়ত: বড় জোর পাঁচটা গাড়ি মুছেছেন পাঁচ ডলার করে। সারাদিনে পঁচিশ ডলার। এক পেগ মদেই তো চলে যাবে দশটা নোট। আর নাচাকোঁদা করার মানসিক বল কোথায়? স্বর্নকেশী মেয়ের চিন্তা? নিউ ইয়র্কে গেলেই বুঝবেন স্বর্নকেশীরা আপনার দিকে তাকাচ্ছেও না। আপনার মতো লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী ভরে আছে নিউ ইয়র্কে। ওদের মান সম্মান, টাকা কড়ি, স্ট্যাটাস সব কিছুই আলাদা। অবৈধ অভিবাসীদের দিকে ওরা তাকাবে কেন? বড়োজোর আপনাকে তাদের গাড়িটা মুছতে দিতে পারে তারা।
৫। আপনি ভেবেছিলেন আপনার গায়ে চা রঙ্গা চামড়া দেখে মজে যাবে আমেরিকানরা? আজ ১৯৭০ সাল নয় যে আমেরিকাতে এশিয়ানদের ভিড় নেই। আজ এশিয়ানদের ভিড়ে প্রকৃত আমেরিকানরা হারিয়ে গেছে। আপনার চা রঙ্গা চামড়া দেখে দেখে ওরা এতো বিরক্ত যে অনেক স্টলের চাকরির ফর্মে লেখাই থাকে ‘নো এশিয়ান প্লিজ।’
৬-৭। ওদের দেশে একটা ব্যাচেলর ডিগ্রীর দাম অনেক। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রী করে আমেরিকায় যান ব্যাচেলর করার জন্য তবে পার ইয়ার মিনিমাম ১২০০০ ডলার দিতে হবে ইউনিভার্সিটিকে। ১২০০০ ডলারের কম হলে সেই ইউনিভার্সিটিকে মানসম্মত বলে ধরা হয়না। তাই আমেরিকার ভিসা পাবার জন্য নিশ্চয়ই আপনি আমেরিকার ভালো ইউনিভার্সিটিতেই এ্যাপ্লাই করেছিলেন। আর সেই ইউনিভার্সিটির পার ইয়ার টিউশন ফি নিশ্চয়ই ১২০০০ ডলারের উপরে। তাহলে আপনি কি মনে করেন চাকরি করে সেখানে থাকা খাওয়া হাতখরচ করে বাকি টাকা টিউশন ফি দিতে পারবেন? আপনি যদি সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন তবে বলবো দেশ থেকে টাকা না নিয়ে আপনি পড়াশোনা শেষ করতে পারবেননা। আর আপনি নিশ্চয়ই তা করতে চাননা। তাহলে জেনে রাখুন আমেরিকায় গিয়ে ১০০ জন ছাত্রের ভেতর ৯৮ জনই পড়াশোনা করতে পারেনা। বাকি ২ জন উচ্চবিত্ত শ্রেনীর। তাই ৯৮ জনই হয়ে যায় অবৈধ কর্মী।
৮। আমেরিকাতে বহু মানুষ আছে যারা প্রায় দশ পনেরো বছর আমেরিকার মাটিতে কাটিয়ে দিয়েছে অবৈধ হিসাবে কিন্তু এখনও পাননি সেই সোনার হরিন-নাগরিকত্ব বা স্থায়ী থাকার সুজোগ গ্রিনকার্ড। আমেরিকাতে বছরের পর বছর কাটালেও আপনি সেখানে অবৈধ হিসাবেই গন্য হবেন। আর অবৈধ হয়ে গেলে দেশে ফিরতেও পারবেননা। দেশে একবার ফিরে ফিরে যাবার কোন সুযোগই নেই। তাই দেখা যায় দেশ থেকে কোন দুঃসংবাদ পেয়ে আমেরিকাতে বসে চোখের পানি ফেলা ছাড়া উপায় থাকে অবৈধ অভিবাসীর।
যারা আমেরিকাকে মনে করে স্বর্গ তাদের জন্য বলছিঃ কোনভাবেই স্টুডেন্ট ভিসায় সেখানে যাবেননা। আপনি যদি ব্যাপক টাকার মালিক হন তবেই আপনি সেখানে যেতে পারেন। কেননা আপনার টাকা থাকলেই আমেরিকা আপনার জন্য স্বর্গ। টাকা না থাকলে ওটা দোজখের চেয়ে খারাপ। আর আমেরিকার ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে রিফিউজ হওয়া আরও বেশি ন্যাক্কারজনক। প্রতিদিন আপনার মতো হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ভিসা পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু দেশের টাকাগুলো আগেই ভিসা ফি হিসাবে নিয়ে যাচ্ছে তারা। তাই আসুন আজ থেকে স্লোগান দেইঃ
আমেরিকা আর নয়, ইংল্যান্ড আর নয়।
ওদেরকে আর দেশ থেকে টাকা নিয়ে যেতে দেবেননা। আপনার সঠিক সিদ্ধান্তের ভুলে দেশের লাখ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে আমেরিকা ইউরোপে। প্রবাসীরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে দেশে যে ডলার পাঠাচ্ছেন আপনি আবার তা আমেরিকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। নিজেকে খুব ছোট বলে মনে হচ্ছেনা? তারা বিনা কারনে রিফিউজ করছে আপনাকে। রিফিউজের কোন কারন দর্শাচ্ছেওনা। জাস্ট আপনার টাকাটা তাদের দরকার। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তেমন হবার কোন সম্ভাবনা নেই। আপনি কেন মালয়েশিয়ায় পড়তে যাবেন? উপরের আমি মালয়েশিয়ায় পড়তে যাবার ৪টি কারন দর্শিয়েছি, পড়ে নিন।
0 Reviews:
Post a Comment